বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর নেই। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রয়াণের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ চার দশকের এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের অবসান ঘটলো। ‘মা, মাটি ও মানুষের নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ নিশ্চিত করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।শেষ মুহূর্তের উপস্থিত স্বজন ও নেতৃবৃন্দহাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেগম জিয়ার শেষ সময়ে তার পাশে ছিলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমান, নাতনি জাইমা রহমান, ছোট ছেলের বউ শার্মিলী রহমান সিঁথি, ছোট ভাই শামীম এসকান্দারসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা।ভোর ৭টার দিকে চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার মৃত্যুর খবর আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করে জানান, মরহুমার নামাজে জানাজার সময়সূচি পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।দীর্ঘ অসুস্থতা ও লড়াইবেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, হার্ট ও ফুসফুসের জটিলতাসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে এ বছরের মে মাসে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গিয়েছিলেন এবং কাতার আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে ফিরেছিলেন। ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার দণ্ড মওকুফ করেছিলেন।বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন খালেদা খানম পুতুল (শান্তি)। ১৯৮১ সালে স্বামী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পর তিনি রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমৃত্যু তিনি এই পদে আসীন ছিলেন।তিনবারের প্রধানমন্ত্রী: ১৯৯১ সালে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। এরপর ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার শাসনামলেই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তিত হয়।সংসদীয় রাজনীতি: খালেদা জিয়া অংশ নেওয়া প্রতিটি নির্বাচনেই (৫টি আসনে) জয়ী হওয়ার এক অনন্য রেকর্ডের অধিকারী ছিলেন।শোকের ছায়াতার মৃত্যুতে রাজধানীসহ সারা দেশের বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দীর্ঘ কারাজীবন এবং অসুস্থতার পর প্রিয় নেত্রীর চলে যাওয়াকে দেশের রাজনীতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।২০১৮ সালের পর থেকে নানা আইনি জটিলতা ও অসুস্থতার কারণে তিনি জনসম্মুখে খুব একটা না আসলেও, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে অংশ নিয়ে সর্বশেষ রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন। আজ তার চিরবিদায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি যুগের পরিসমাপ্তি ঘটল।