পশ্চিমা বিশ্বের ৯টি প্রধান দেশে পরিচালিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জরিপে দেখা গেছে, এসব দেশের প্রায় ১০ হাজার মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে গভীর অসন্তোষ বিরাজ করছে। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইপসোস পরিচালিত এই জরিপে সুইডেন ছাড়া বাকি আটটি দেশেই গণতন্ত্র নিয়ে মানুষের সন্তুষ্টির হার ৫০ শতাংশের নিচে। এমনকি, প্রায় সব দেশেই ভবিষ্যতের গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।জরিপে ক্রোয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মতামত নেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা যায়, একমাত্র সুইডেনে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ (প্রায় ৬৫ শতাংশ) গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে সন্তুষ্ট।বাকি দেশগুলোর চিত্র উদ্বেগজনক:দেশসন্তুষ্টির হারক্রোয়েশিয়া১৮%ফ্রান্স১৯%যুক্তরাষ্ট্র২০%যুক্তরাজ্য২৬%স্পেন২৭%ইতালি২৯%নেদারল্যান্ডস৩৬%পোল্যান্ড৪০%নেদারল্যান্ডসে (৩৬% সন্তুষ্ট, ৩৭% অসন্তুষ্ট) এবং পোল্যান্ডে (৪০% সন্তুষ্ট, ৩১% অসন্তুষ্ট) মতামত প্রায় বিভক্ত হলেও, অন্য ছয়টি দেশে সন্তুষ্টির গড় হার ২৪ শতাংশের কম।অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গত পাঁচ বছরে তাদের দেশে গণতন্ত্রের মান আরও খারাপ হয়েছে। এই মত সবচেয়ে বেশি পোষণ করেন ফ্রান্সের ৮১ শতাংশ এবং নেদারল্যান্ডসের ৭৬ শতাংশ মানুষ—যেখানে চলতি বছর সরকার পতনের ঘটনা ঘটেছে।একই মত প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ৬১ শতাংশ এবং স্পেন ও যুক্তরাজ্যের ৫৮ শতাংশ মানুষ। ব্যতিক্রম শুধু পোল্যান্ড, যেখানে ৪২ শতাংশ মনে করেন গণতন্ত্রের মান কিছুটা ভালো হয়েছে, বিপরীতে ৩০ শতাংশের মত খারাপ হয়েছে।সুইডেন বাদে বাকি সব দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর দুশ্চিন্তা লক্ষ্য করা গেছে। ভবিষ্যতে গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ফ্রান্সে সর্বোচ্চ (৮৬ শতাংশ)। এছাড়া স্পেন (৮০ শতাংশ), যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডে (৭৫ শতাংশ), নেদারল্যান্ডসে (৭৪ শতাংশ), ক্রোয়েশিয়ায় (৭৩ শতাংশ), যুক্তরাষ্ট্রে (৬৯ শতাংশ) এবং ইতালিতে (৬৪ শতাংশ) গভীর উদ্বেগ রয়েছে।গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের এই আস্থাহীনতার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:ভুয়া তথ্য (Disinformation): ফ্রান্স (৫৬%), যুক্তরাজ্য (৬৪%), সুইডেন (৬৭%), নেদারল্যান্ডস (৭৫%) এবং পোল্যান্ডে (৭৬%) এটিকে সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছে।দুর্নীতি: যুক্তরাষ্ট্র (৬৩%), স্পেন (৭৩%) এবং ক্রোয়েশিয়ায় (৮০%) এটিকে সর্বোচ্চ হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।অর্থনৈতিক বৈষম্য ও চরমপন্থা এবং রাজনৈতিক জবাবদিহির অভাব।গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য জরিপে অংশগ্রহণকারীরা যেসব পদক্ষেপের কথা বলেছেন, তার মধ্যে রয়েছে:কঠোর দুর্নীতিবিরোধী আইন ও এর কার্যকর বাস্তবায়ন।সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর আরও কার্যকর নিয়ন্ত্রণ।নাগরিক শিক্ষার উন্নয়ন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা।জরিপে দেখা যায়, বেশির ভাগ দেশে মৌলিক বা ‘র‌্যাডিক্যাল’ পরিবর্তনের দাবি বেড়েছে। মানুষ মনে করে বর্তমান ব্যবস্থাটি ধনীদের স্বার্থে কাজ করছে। ক্রোয়েশিয়ায় ৬৯ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৬৬ শতাংশ মানুষ এমন পরিবর্তনের দাবি জানান। তবে একই সঙ্গে প্রায় সব দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সমঝোতায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।