বাজিতপুর: ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সম্ভাবনার জনপদ
কিশোরগঞ্জ জেলার অন্যতম জনবহুল ও ঐতিহ্যবাহী উপজেলা বাজিতপুর। নরসুন্দা নদী বিধৌত এ জনপদের প্রতিটি গ্রাম যেন একেকটি জীবন্ত ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রাণচঞ্চল মানুষের গল্পে ভরপুর। এখানকার প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আবার অনেক ক্ষেত্রেই নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাংলাদেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলের কিশোরগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক উপজেলা বাজিতপুর। খাল-বিল, নদী-নালা ও হাওরের মাঝে গড়ে ওঠা এই জনপদ তার শতাব্দীপ্রাচীন ইতিহাস, মসলিনের ঐতিহ্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্য অবকাঠামো এবং সাহসী মানুষের কারণে আজও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ঐতিহ্য ও শিক্ষা ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদবাজিতপুর উপজেলা গঠিত হয়েছে ১১টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভা নিয়ে। পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লা যেমন—পূর্ব ও পশ্চিম বসন্তপুর, শ্রীধরগঞ্জ, রাবারকান্দি, মথুরাপুর, পাগলারচর—দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা, কৃষি ও শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ভাগলপুর অঞ্চলে অবস্থিত জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দেশের অন্যতম বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, যা স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও কৃষিনির্ভর জীবনবাজিতপুরের অধিকাংশ গ্রাম কৃষিনির্ভর। মাইজচর, পিরিজপুর, হিলচিয়া, আলীনগর, গজারিয়া, গজারিয়া চর, সাদেকপুর, দেবগ্রাম, সাহেদল, হিলচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ধান, পাট, সবজি ও মাছচাষ হচ্ছে প্রধান পেশা। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষ নদী ও হাওরনির্ভর জীবনে অভ্যস্ত। অনেক গ্রামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী হাট-বাজার যা এখনও সপ্তাহে দু'দিন মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।
সমস্যা ও জনদুর্ভোগউন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামবাসীকে প্রতিনিয়ত লড়তে হয় মৌলিক সমস্যার সঙ্গে। অনেক গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি, টেকসই রাস্তাঘাটের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে গ্রামীণ রাস্তাগুলো কাদা ও জলাবদ্ধতায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।সম্প্রতি বেশ কিছু এলাকায় ড্রেনেজ ও ময়লা-আবর্জনার অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজিতপুর পৌরসভার আশপাশে একাধিক এলাকায় দেখা গেছে ময়লার ভাগাড় তৈরি হয়েছে, যা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
উন্নয়ন ও সম্ভাবনাতবে এসব চ্যালেঞ্জের মাঝেও বাজিতপুরের মানুষ আশাবাদী। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসন একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে পাকা রাস্তা নির্মাণ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, পানীয় জল সরবরাহ, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন।
মানুষের প্রত্যাশাবাজিতপুরবাসীর চাওয়া, প্রতিটি গ্রামে যেন সমানভাবে উন্নয়ন পৌঁছায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে যেন আরও এগিয়ে যায় এই জনপদ। বিশেষ করে তরুণ সমাজ চাইছে—তাদের গ্রামে যেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও ডিজিটাল সেবা পৌঁছায়।
ইতিহাস ও নামকরণবাজিতপুর শহরটি গড়ে তোলেন মোগল সেনানায়ক বায়েজিদ খাঁ। তাঁর নামেই এর নামকরণ "বাজিতপুর"। ব্রিটিশ আমলে দিলালপুর ঘাট ছিল উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত নদীবন্দর। এখানেই তৈরি হতো এক সময়কার বিশ্বখ্যাত তাঞ্জাব মসলিন, যার কাঁচামাল মিলত স্থানীয়ভাবেই।১৮২৩ সালে এটি থানায় উন্নীত হয় এবং ১৯৮৩ সালে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাজিতপুর। পূর্বে এটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অংশ ছিল।
ভৌগোলিক অবস্থান ও আয়তনউপজেলাটির আয়তন প্রায় ১৯৩.৭৬ বর্গ কিলোমিটার।
উত্তরে: কটিয়াদি, নিকলী, অষ্টগ্রাম
দক্ষিণে: কুলিয়ারচর, ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল
পূর্বে: অষ্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর
পশ্চিমে: কটিয়াদি উপজেলা
বাজিতপুরকে বলা হয় "ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার", কারণ এখান থেকেই শুরু হয় হাওরের জীবন।
প্রশাসনিক বিভাজন ও ইউনিয়নসমূহবাজিতপুরে রয়েছে
১টি পৌরসভা
১১টি ইউনিয়ন
৯২টি মৌজা
১৭৮টি গ্রাম
বাজিতপুর পৌরসভার ইতিহাস:বাংলাদেশের প্রাচীন পৌরসভাগুলোর একটি হলো বাজিতপুর পৌরসভা, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৬৯ সালে—অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনামলের মধ্যভাগে। এটি কিশোরগঞ্জ জেলার প্রথমদিকের পৌরসভাগুলোর একটি এবং সে সময়কার ঐতিহ্যবাহী প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত ছিল।বাজিতপুর পৌরসভাপ্রতিষ্ঠাকাল ও প্রশাসনিক বিকাশ:
প্রতিষ্ঠিত: ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে (ব্রিটিশ শাসনামলে)
শ্রেণি: বর্তমানে একটি ‘ক্লাস-বি’ পৌরসভা হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে।
প্রথমদিকে বাজিতপুর পৌর এলাকা ছিল একটি ছোট্ট জনপদ। তবে সময়ের পরিক্রমায় এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে রূপ নেয়।
ভৌগোলিক পরিধি ও ওয়ার্ড:
মোট আয়তন: প্রায় ৭.৭৪ বর্গ কিলোমিটার
ওয়ার্ড সংখ্যা: ৯টি
মহল্লা: প্রায় ২০টির অধিক
পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূ্র্ণ বাজার, বাসস্ট্যান্ড, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ধর্মীয় স্থান ও ঐতিহাসিক নিদর্শন।
অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট:
একসময় দিলালপুর নদীবন্দর ছিল বাজিতপুর পৌর এলাকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্য কেন্দ্র।
এই অঞ্চল ছিল মসলিন ও তাঁত শিল্পের জন্য বিখ্যাত।
এখনো কিছু এলাকায় তাঁতের কাজ দেখা যায়, যদিও তা আগের মত বাণিজ্যিক নেই।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা:
পৌরসভার অন্তর্গত রয়েছে:
বাজিতপুর সরকারি কলেজ
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল
অনেক প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষার হার: তুলনামূলকভাবে উচ্চ, এবং ক্রমাগত উন্নতির পথে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য:
পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক মসজিদ, মন্দির এবং আখড়া, যেমন:
ঘাগটিয়া জামে মসজিদ
পাগলা শংকরের আখড়া
দেওয়ানবাড়ী মসজিদ
প্রতিবছর পৌরসভা এলাকায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যা এখানকার সামাজিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
জনসংখ্যা ও বসবাসকারীর ধরণ:
পৌর এলাকায় বাস করেন শিক্ষক, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, প্রবাসীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
নাগরিক সেবায় উন্নয়ন হয়েছে গত কয়েক বছরে—পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন, রাস্তা পাকা করণ, বিদ্যুৎ সংযোগ ইত্যাদি।
বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা:চ্যালেঞ্জ:
ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন দরকার
ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল
পৌর এলাকার কিছু রাস্তাঘাট এখনো সংস্কারের অপেক্ষায়
সম্ভাবনা:
স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা ও পর্যটনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কমপ্লেক্স ঘিরে গড়ে উঠতে পারে স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক জোন
পুরাতন দিলালপুর বন্দর ও ঐতিহ্য ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা সম্ভববাজিতপুর পৌরসভা কেবল একটি প্রশাসনিক একক নয়—এটি ঐতিহ্যের ধারক, শিক্ষার কেন্দ্র, বাণিজ্যের ঘাঁটি এবং মানবিক সহাবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সঠিক পরিকল্পনা ও জনসম্পৃক্ততায় বাজিতপুর পৌরসভা হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম আধুনিক পৌর শহর।
বাজিতপুর—অতীতের গৌরব আর আগামীর সম্ভাবনার সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা এক ঐতিহাসিক শহর।
উল্লেখযোগ্য ইউনিয়ন:হুমায়ুনপুর: হুমাইপুর ইউনিয়ন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার ১নং ইউনিয়ন। এটি মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী ও সংস্কৃতিমণ্ডিত ইউনিয়ন। এখানে এক সময় অসংখ্য খাল, বিল ও “হু হু” শব্দ করা এক বিশেষ প্রজাতির পাখির জন্য স্থানটির নামকরণ “হুমাইপুর” হয়েছে।
শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, খেলাধুলাসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে হুমাইপুর ইউনিয়ন আজও নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে চলেছে।হুমাইপুর ইউনিয়নপ্রাথমিক তথ্য
ইউনিয়নের নাম ও ঠিকানা: ০১নং হুমাইপুর ইউনিয়ন, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ
আয়তন: উল্লেখ নেই
জনসংখ্যা: ১২,৭৪৭ জন (২০১৪ সালের জন্মনিবন্ধন অনুযায়ী)
গ্রামের সংখ্যা: ০৯টি
মৌজার সংখ্যা: ১০টি
হাট/বাজারের সংখ্যা: ২টি
উপজেলা সদর থেকে যোগাযোগ: উল্লেখ নেইশিক্ষা তথ্য
শিক্ষার হার: ৭০% (২০১১ সালের শিক্ষা জরিপ অনুযায়ী)
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৬টি
বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১টি
বালক উচ্চ বিদ্যালয়: ১টি
বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়: নেই উল্লেখ
মাদ্রাসা: ১টি
কলেজ: নেই উল্লেখ
প্রশাসনিক তথ্য
ইউপি ভবন স্থাপনের সাল: উল্লেখ নেই
নবগঠিত পরিষদের তথ্য:
শপথ গ্রহণের তারিখ: উল্লেখ নেই
প্রথম সভার তারিখ: উল্লেখ নেই
মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ: ২৭/০৭/২০১৬ ইং
জনবল
নির্বাচিত পরিষদ সদস্য: ১৩ জন
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব: ১ জন
গ্রাম পুলিশ: ৯ জনদিলালপুর: দিলালপুর ইউনিয়ন কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন। এখানকার মানুষ ধর্ম, শিক্ষা ও কৃষিনির্ভর জীবনে যুক্ত। ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটি অস্থায়ী ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে ৩টি কক্ষে।দিলালপুর ইউনিয়নপ্রাথমিক তথ্য
ইউনিয়নের নাম: দিলালপুর ইউনিয়ন
উপজেলা: বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ
মোট জমির পরিমাণ: ১০ শতাংশ (প্রশাসনিক ভবনসংক্রান্ত)
মোট আয়তন: ১১.৮০ বর্গ কিলোমিটার
গ্রামের সংখ্যা: ২৬টি
মৌজার সংখ্যা: ৪টি
খানার সংখ্যা: ৩৪১০টি
হাট/বাজার: ২টি
পোস্ট অফিস: ১টি
ক্লিনিক: ২টি
জনসংখ্যা তথ্য
মোট জনসংখ্যা: ২৭,৪৫০ জন
পুরুষ: ১৪,২২১ জন
নারী: ১৩,২২৯ জন
ভোটার সংখ্যা: ১১,৬০০ জন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৩টি
বেসরকারি স্কুল: ১টি
উচ্চ বিদ্যালয়: ১টি
মাদ্রাসা: ১টি
এতিমখানা: ২টি
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
মসজিদ: ২৯টি
ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য
ইউপি ভবনের অবস্থা: অস্থায়ী, ৩টি কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে
বলিয়ার্দী: কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার অন্যতম ইউনিয়ন বলিয়ারদী। বারুড়িয়া ও ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে গড়ে ওঠা এই ইউনিয়ন একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশ আমলে ঢাকা, কলকাতা ও রেংগুনগামী বড় নৌজাহাজ চলাচলের পথ ছিল। এই ঐতিহাসিক অঞ্চলটি আজও শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে তার স্বকীয়তা ধরে রেখেছে।বলিয়ারদী ইউনিয়নপ্রাথমিক তথ্য
ইউনিয়নের নাম: ৩নং বলিয়ারদী ইউনিয়ন পরিষদ
উপজেলা: বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ
আয়তন: প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার
মোট জমির পরিমাণ: ২,৩১০ একর
গ্রামের সংখ্যা: ২৩টি
মৌজার সংখ্যা: ৬টি
হাট/বাজার সংখ্যা: ১টি
জনসংখ্যা তথ্য
মোট জনসংখ্যা: ২১,৯২৮ জন
পুরুষ: ১২,৪১১ জন
নারী: ৯,৫১৭ জন
ভোটার সংখ্যা: ১০,৩০০ জন
শিক্ষা ব্যবস্থা
শিক্ষার হার: ৫০%
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৫টি
বেসরকারি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়: ৩টি
মাদ্রাসা: ১টি
প্রশাসনিক জনবল
নির্বাচিত পরিষদ সদস্য: ১৩ জন
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব: ১ জন
গ্রাম পুলিশ: ৯ জন
ঐতিহাসিক/পর্যটন স্থান
পর্যটন/ঐতিহাসিক স্থান: নেই
সরারচরঃ সরারচর ইউনিয়ন, কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন, যা ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে অবস্থিত এই ইউনিয়নটি শিক্ষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, কৃষি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে তার স্বকীয়তা বজায় রেখেছে। এক সময়কার ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং আধুনিক উন্নয়নের সমন্বয়ে সরারচর আজও বিস্ময় জাগায়।সরারচর ইউনিয়নপ্রাথমিক তথ্য
ইউনিয়নের নাম: ৪নং সরারচর ইউনিয়ন পরিষদ
প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯২০
ইউপি ভবন স্থাপনকাল: ২৮/১০/২০০৭ ইং
উপজেলা: বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ
আয়তন: ১১.৪৭ বর্গ কিলোমিটার
গ্রামের সংখ্যা: ২৯টি
মৌজার সংখ্যা: ৭টি
হাট/বাজার: ২টি
যোগাযোগ মাধ্যম: পিকআপ, সিএনজি, অটোরিকশা, রিকশা
জনসংখ্যা ও ভোটার
মোট জনসংখ্যা: ৪০,২৭৯ জন
পুরুষ: ১৯,১৫৪ জন
নারী: ২১,১২৫ জন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়: ১৫টি
বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়: ৫টি
মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়: ৩টি
নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়: ২টি
সিনিয়র মাদ্রাসা: ৫টি
ফুরকানিয়া মাদ্রাসা: ৩টি
মক্তব: ১০টি
কলেজ: ২টি
এতিমখানা: ২টি
ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান
মসজিদ: ৫৫টি
কবরস্থান: ২০টি
শ্মশানঘাট: ৩টি
ঈদগাহ মাঠ: ১৮টি
কমিউনিটি সেন্টার: ৯টি
ক্লাব (রেজিস্টার্ড): ৬টি
সমাজকল্যাণ কেন্দ্র: ২টি
পানিসম্পদ ও কৃষি
নলকূপ: ১০৫২টি
অগভীর নলকূপ: ৮০টি
গভীর নলকূপ: ২৫৫টি
পাওয়ার পাম্প: ১৬টি
ধান ভাঙ্গার কল: ২৫টি
রাইস মিল (আটার হলার): ১৯টি
অবকাঠামো
পাকা সেতু (ব্রিজ): ১০টি
পাকা কালভার্ট: ২০টি
প্রশাসনিক ও সামাজিক অবকাঠামো
তহসিল অফিস: ১টি
আদর্শ/গুচ্ছগ্রাম/আবাসন প্রকল্প: ২টি
মৎস্য সমবায় সমিতি: ৩টি
কৃষক সমবায় সমিতি: ১২টি
বিত্তহীন সমবায় সমিতি:
পুরুষ: ১টি
নারী: ১টি
ইউনিয়ন পরিষদ জনবল
দায়িত্বরত চেয়ারম্যান: জনাব হাবিবুর রহমান স্বপন
নির্বাচিত পরিষদ সদস্য: ১৩ জন
ইউনিয়ন পরিষদ সচিব: ১ জন
হিসাব সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর: ১ জন
গ্রাম পুলিশ: ১০ জন
উদ্যোক্তা: ২ জন
গ্রামের তালিকা (ওয়ার্ডভিত্তিক)
ক্রমওয়ার্ডগ্রামসমূহ১ওয়ার্ড ১খা: ভান্ডা, বুড়িকান্দা, মজলিশপুর২ওয়ার্ড ২শরৎগঞ্জ বাজার, গোবিন্দপুর৩ওয়ার্ড ৩বাল্লা, মিরাপুর৪ওয়ার্ড ৪তেঘরিয়া, নুরপুর, পথারিয়াকান্দি৫ওয়ার্ড ৫পুরানগাঁও৬ওয়ার্ড ৬কৈকুড়ী, উত্তর সরারচর, পুরানখলা৭ওয়ার্ড ৭দক্ষিণ সরারচর৮ওয়ার্ড ৮কামালপুর, বেকী, পশ্চিম ভাগলপুর৯ওয়ার্ড ৯মাছিম কৈলাগ, হিলচিয়া, হালিমপুর, দিঘীরপাড়, মাইজচর, পিরিজপুর
জনসংখ্যা ও ধর্মীয় চিত্র
মোট জনসংখ্যা: ১,৯৭,০৮১
পুরুষ: ৫০.৪৯%
নারী: ৪৯.৫১%
ধর্ম: মুসলিম ৮৭.৪৯%, হিন্দু ১২.৫১%
শিক্ষা ও স্বাস্থ্যশিক্ষার হার: ৭৫.৭৫%
সরকারি কলেজ: বাজিতপুর সরকারি কলেজ (১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত, ২০১৮ সালে সরকারীকরণ)
প্রাইভেট মেডিকেল: জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ
নার্সিং কলেজ: ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম নার্সিং কলেজ
উচ্চ বিদ্যালয়: ১৩টি
প্রাথমিক বিদ্যালয় (সরকারি ও বেসরকারি): ১০৬টি
মাদ্রাসা: ১০টি
স্বাস্থ্যসেবা:
বাজিতপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল
জহুরুল ইসলাম মেডিকেল হাসপাতাল
অর্থনীতি ও জীবিকাবাজিতপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষিনির্ভর। ধান, পাট, সবজি, মাছ—এই চারটি খাত অর্থনীতির প্রাণ। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, গার্মেন্টস শ্রমিক প্রেরণ ও প্রবাসী আয়ও বড় ভূমিকা রাখছে।
পর্যটন ও ঐতিহ্যবাহী স্থান
দিলালপুর নদীবন্দর
পাগলা শংকরের আখড়া
ডাকবাংলো মাঠ ও দীঘি
কৈলাগ ব্রিজ
ঘাগটিয়া ও দেওয়ানবাড়ী জামে মসজিদ
সুলতানপুর জামে মসজিদ
সরারচর বিমানবন্দর (বর্তমানে বন্ধ)
ঘোড়াওত্রা নদী
বাজিতপুর স্মৃতিসৌধ
ধর্মীয় গুরুত্বএখানে রয়েছে হযরত শাফাই শাহ আউলিয়া (রহঃ)-এর মাজার শরীফ, যিনি ছিলেন হযরত শাহজালালের ৩৬০ সফরসঙ্গীর অন্যতম। তাঁর অবস্থান পিরিজপুরে।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি
আবদুল মোনেম খান: পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্নর
জহুরুল ইসলাম: ইসলাম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা
মোহনকিশোর নমোদাস: ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকারী
মোশাররফ হোসেন: জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড়
হারুন-উর-রশিদ (বীর প্রতীক): মুক্তিযোদ্ধা
সমস্যা ও সম্ভাবনাসমস্যা:
বেকারত্ব
নদীভাঙন
কিছু অঞ্চলে রাস্তাঘাট ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ঘাটতি
সরারচর বিমানবন্দর পুনরায় চালুর দাবি
সম্ভাবনা:
স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা ও পর্যটনে প্রবল সম্ভাবনা
মসলিন ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে প্রকল্প গ্রহণ করা গেলে বিশ্বে পরিচিতি বাড়বে
কৃষি ও হাঁস-মুরগির খামার বিস্তারে উদ্যোক্তারা এগোচ্ছেন
উপসংহারবাজিতপুর কেবল একটি উপজেলা নয়—এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, ধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্ভাবনার এক অনন্য মিশেল। প্রয়োজন কেবল যথাযথ পরিকল্পনা ও সুষ্ঠু নেতৃত্ব—তাহলেই এই জনপদ হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক আদর্শ উপজেলা।
বাজিতপুর—যেখানে অতীতের ঐতিহ্য আর ভবিষ্যতের আশার আলো একসাথে হাসে।
২ ঘন্টা আগে