রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ

দেশের ৮৮% নিম্ন আয়ের মানুষ দিনে এক বেলা রুটি বা বিস্কুট খেয়ে থাকেন

দেশের ৮৮% নিম্ন আয়ের মানুষ দিনে এক বেলা রুটি বা বিস্কুট খেয়ে থাকেন
ছবিঃ এআই দিয়ে তৈরি।

দেশের ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এখন প্রতিদিন অন্তত এক বেলা ভরসা করছেন শুধু পাউরুটি বা বিস্কুটে। সময়ের অভাব, আকাশছোঁয়া দাম আর আয়-ব্যয়ের অমিল—সব মিলে খাবার তালিকায় থেকেছে কেবল ‘বুক ফোলানো বাতাস আর বিস্কুটের আধা কামড়’।

এই চিত্র উঠে এসেছে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে। দেশের ১৫টি অঞ্চলজুড়ে ১ হাজার ২২ জনের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয়ের মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা করতে পারেন না—সময়ের অভাব ও ব্যয়ের ভারে।

জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক চাপে ৯৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো বেলায় ‘ভরপেট’ খাওয়া বাদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়—পেটের ক্ষুধা মেটাতে তারা বেছে নিচ্ছেন কলা, পাউরুটি বা এক কাপ চা-বিস্কুট। আর দুপুর বা বিকেলের খাবার তো অনেকটা বিলাসিতা হিসেবেই রয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য।

গতকাল ঢাকায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক আয়োজিত “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা ও ভ্যাট” শীর্ষক এক সেমিনারে তুলে ধরা হয় এই ভয়াবহ বাস্তবতা।

সেমিনারে বক্তারা জানান, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিস্কুট ও পাউরুটির ওপর ভ্যাট ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে মূলত ধাক্কা খাচ্ছেন সেইসব নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা, যাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার অন্যতম উপায় ছিল এসব কমদামী খাদ্যপণ্য। অথচ তাদের ৭০ শতাংশই আশা করেছিলেন, এবারের বাজেটে অন্তত এ পণ্যে ট্যাক্স কমবে।

এনবিআর কী বলছে?

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “ভ্যাট কমানো বা বাড়ানো নীতিগত প্রশ্ন। আমাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আছে, আবার আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু শর্তও মানতে হয়। সেই ভারসাম্য রেখেই বাজেট সাজানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যাও এবার বাড়ানো হয়েছে।

ব্যবসায়ী মহলের ক্ষোভ:

বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সুপারিশ করেছিলাম ভ্যাট সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ রাখা হোক। সেটি না শুনে উল্টো বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্ষুধার সাথে সরাসরি অন্যায়।”

বিশ্লেষণ বলছে কী?

মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে, আয় বাড়ছে না তেমন। বেকারত্বও এক ভয়াবহ বাস্তবতা। আর তার মাঝেই যদি সরকার নিত্যপণ্যে কর চাপায়, তাহলে এর চাপ যে শুধুই ভোক্তার কাঁধে পড়বে—তা নিয়ে আর প্রশ্নের অবকাশ নেই।

ভ্যাট বাড়িয়ে যেভাবে বিস্কুট বা পাউরুটি বিলাসে পরিণত করা হচ্ছে, তাতে সরকারের কর আদায়ের লক্ষ্য পূর্ণ হলেও সাধারণ জনগণের খাবার টেবিলটা হয়ে যাচ্ছে আরও ফাঁকা।

উপসংহার:
এ দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির খাবার মানে কেবল পেট ভরানো নয়, টিকে থাকার সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে এখন তারা লড়ছে একটি বিস্কুট কিংবা আধা রুটি দিয়ে। নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে রাজস্ব আদায়ের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে যেন মানুষের পেট খালি না থাকে, তা নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদন: বাজিতপুর নিউজ
#ভ্যাট #নিম্নআয় #খাদ্যনিরাপত্তা #বিস্কুট_পাউরুটি #ভোক্তারদুর্ভোগ #বাজেট২০২৫ #BajitpurNews

বিষয় : জাতীয়

আপনার মতামত লিখুন

বাজিতপুর নিউজ

রোববার, ২৪ আগস্ট ২০২৫


দেশের ৮৮% নিম্ন আয়ের মানুষ দিনে এক বেলা রুটি বা বিস্কুট খেয়ে থাকেন

প্রকাশের তারিখ : ২৭ জুন ২০২৫

featured Image

দেশের ৮৮ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ এখন প্রতিদিন অন্তত এক বেলা ভরসা করছেন শুধু পাউরুটি বা বিস্কুটে। সময়ের অভাব, আকাশছোঁয়া দাম আর আয়-ব্যয়ের অমিল—সব মিলে খাবার তালিকায় থেকেছে কেবল ‘বুক ফোলানো বাতাস আর বিস্কুটের আধা কামড়’।

এই চিত্র উঠে এসেছে ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক-এর সাম্প্রতিক এক জরিপে। দেশের ১৫টি অঞ্চলজুড়ে ১ হাজার ২২ জনের ওপর পরিচালিত এই জরিপে দেখা যায়, ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয়ের মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ সকালের নাশতা করতে পারেন না—সময়ের অভাব ও ব্যয়ের ভারে।

জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক চাপে ৯৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো বেলায় ‘ভরপেট’ খাওয়া বাদ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়—পেটের ক্ষুধা মেটাতে তারা বেছে নিচ্ছেন কলা, পাউরুটি বা এক কাপ চা-বিস্কুট। আর দুপুর বা বিকেলের খাবার তো অনেকটা বিলাসিতা হিসেবেই রয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য।

গতকাল ঢাকায় ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং ইয়ুথ পলিসি নেটওয়ার্ক আয়োজিত “প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা ও ভ্যাট” শীর্ষক এক সেমিনারে তুলে ধরা হয় এই ভয়াবহ বাস্তবতা।

সেমিনারে বক্তারা জানান, ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিস্কুট ও পাউরুটির ওপর ভ্যাট ৫% থেকে বাড়িয়ে ৭.৫% করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তে মূলত ধাক্কা খাচ্ছেন সেইসব নিম্ন আয়ের মানুষ ও শিক্ষার্থীরা, যাদের নিত্যদিনের বেঁচে থাকার অন্যতম উপায় ছিল এসব কমদামী খাদ্যপণ্য। অথচ তাদের ৭০ শতাংশই আশা করেছিলেন, এবারের বাজেটে অন্তত এ পণ্যে ট্যাক্স কমবে।

এনবিআর কী বলছে?

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, “ভ্যাট কমানো বা বাড়ানো নীতিগত প্রশ্ন। আমাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা আছে, আবার আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু শর্তও মানতে হয়। সেই ভারসাম্য রেখেই বাজেট সাজানো হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, কর আদায়ে স্বচ্ছতা ও প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু হচ্ছে। পাশাপাশি অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সংখ্যাও এবার বাড়ানো হয়েছে।

ব্যবসায়ী মহলের ক্ষোভ:

বাংলাদেশ বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা সুপারিশ করেছিলাম ভ্যাট সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ রাখা হোক। সেটি না শুনে উল্টো বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের ক্ষুধার সাথে সরাসরি অন্যায়।”

বিশ্লেষণ বলছে কী?

মূল্যস্ফীতি এখন ৯ শতাংশের ওপরে। অন্যদিকে, আয় বাড়ছে না তেমন। বেকারত্বও এক ভয়াবহ বাস্তবতা। আর তার মাঝেই যদি সরকার নিত্যপণ্যে কর চাপায়, তাহলে এর চাপ যে শুধুই ভোক্তার কাঁধে পড়বে—তা নিয়ে আর প্রশ্নের অবকাশ নেই।

ভ্যাট বাড়িয়ে যেভাবে বিস্কুট বা পাউরুটি বিলাসে পরিণত করা হচ্ছে, তাতে সরকারের কর আদায়ের লক্ষ্য পূর্ণ হলেও সাধারণ জনগণের খাবার টেবিলটা হয়ে যাচ্ছে আরও ফাঁকা।

উপসংহার:
এ দেশের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির খাবার মানে কেবল পেট ভরানো নয়, টিকে থাকার সংগ্রাম। সেই সংগ্রামে এখন তারা লড়ছে একটি বিস্কুট কিংবা আধা রুটি দিয়ে। নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে রাজস্ব আদায়ের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে যেন মানুষের পেট খালি না থাকে, তা নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদন: বাজিতপুর নিউজ
#ভ্যাট #নিম্নআয় #খাদ্যনিরাপত্তা #বিস্কুট_পাউরুটি #ভোক্তারদুর্ভোগ #বাজেট২০২৫ #BajitpurNews


বাজিতপুর নিউজ

প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ মোশিউর রহমান আতিক | নির্বাহী সম্পাদক: মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
কপিরাইট © ২০২৫ বাজিতপুর নিউজ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত