
বিশ্ব আবারও প্রবল সামরিক প্রতিযোগিতার দিকে এগোচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত পররাষ্ট্রনীতি মিলিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট, প্রতিরক্ষা বাজেট আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট এক বিশ্লেষণে জানায়, এ প্রবণতা শুধু কূটনৈতিক ভারসাম্য নয়, বদলে দিচ্ছে গোটা অর্থনীতির গতি ও গঠনও।
নতুন পরিকল্পনায় ন্যাটো দেশগুলো জিডিপির ৩.৫% সরাসরি প্রতিরক্ষা খাতে ও ১.৫% নিরাপত্তা সম্পর্কিত খাতে ব্যয় করবে বলে সম্মত হয়েছে। বাস্তবায়ন হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার। এটা শুধু ‘শান্তি লভ্যাংশের’ অবসান নয়, বরং অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ।
এই বিপুল ব্যয়ের অর্থ জোগাতে গিয়ে সামাজিক খাতের বাজেট কমানো হতে পারে। ইতোমধ্যে বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্যসেবা, ঋণের সুদ, অবকাঠামো খাতে খরচ বাড়তে থাকায় বহু দেশের বাজেট ভারসাম্য নড়বড়ে। বিশ্লেষণ বলছে, অতিরিক্ত সামরিক ব্যয় স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বাড়িয়ে দেবে। এতে রাজস্বের বড় একটা অংশ যাবে ঋণ পরিশোধে।
সামরিক খাত থেকে অনেক প্রযুক্তির জন্ম হয়েছে—ইন্টারনেট, জিপিএস, পারমাণবিক শক্তি। বর্তমানেও সামরিক গবেষণা কিছু খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সামরিক গবেষণা ১% বাড়লে সংশ্লিষ্ট শিল্পের উৎপাদনশীলতা ৮.৩% পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে এটা সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে সীমিত, যেমন—AI, সাইবার ডিফেন্স, ড্রোন ইত্যাদি।
রাজনীতিকদের আশা, এই খাতে অর্থ ঢাললেই কর্মসংস্থান বাড়বে। বাস্তবতা ভিন্ন। আধুনিক অস্ত্র তৈরি হচ্ছে অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে—যার ফলে নতুন কর্মসংস্থান সীমিত। ইউরোপের ৩০ মিলিয়ন শিল্পশ্রমিকের তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান হবে মাত্র ৫ লাখ, যা সামান্য।
বিশেষ অঞ্চলে ভোটার তুষ্টির জন্য যদি এই ব্যয় হয়, তাহলে তা বিপজ্জনক। বরং প্রকৃত নিরাপত্তা প্রয়োজন থেকেই যদি ব্যয় বাড়ে, তা জনগণকে স্পষ্ট জানাতে হবে। না হলে সামাজিক খাত সংকুচিত হয়ে পড়বে, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে হবে কর বৃদ্ধির চড়া মাশুল।
সারসংক্ষেপে বললে:
বিশ্ব এখন এক নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করছে—যেখানে অস্ত্রের ভার কাঁধে নিয়েই চলতে হচ্ছে। শুধু কূটনৈতিক বা নিরাপত্তা নয়, প্রতিরক্ষা বাজেট এখন রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির এক বিরাট স্তম্ভ হয়ে উঠছে। তবে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা আর এর সামাজিক খরচের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে—আমরা যুদ্ধ জিতেও স্বাধীনতা হারাতে পারি।
বিষয় : আন্তর্জাতিক বিশ্ব অর্থনীতি
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৭ জুন ২০২৫
বিশ্ব আবারও প্রবল সামরিক প্রতিযোগিতার দিকে এগোচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধ, তাইওয়ান নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনিশ্চিত পররাষ্ট্রনীতি মিলিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট, প্রতিরক্ষা বাজেট আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুতগতিতে বাড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট এক বিশ্লেষণে জানায়, এ প্রবণতা শুধু কূটনৈতিক ভারসাম্য নয়, বদলে দিচ্ছে গোটা অর্থনীতির গতি ও গঠনও।
নতুন পরিকল্পনায় ন্যাটো দেশগুলো জিডিপির ৩.৫% সরাসরি প্রতিরক্ষা খাতে ও ১.৫% নিরাপত্তা সম্পর্কিত খাতে ব্যয় করবে বলে সম্মত হয়েছে। বাস্তবায়ন হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে বার্ষিক অতিরিক্ত ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার। এটা শুধু ‘শান্তি লভ্যাংশের’ অবসান নয়, বরং অর্থনৈতিক ভারসাম্যের জন্য এক নতুন চ্যালেঞ্জ।
এই বিপুল ব্যয়ের অর্থ জোগাতে গিয়ে সামাজিক খাতের বাজেট কমানো হতে পারে। ইতোমধ্যে বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্যসেবা, ঋণের সুদ, অবকাঠামো খাতে খরচ বাড়তে থাকায় বহু দেশের বাজেট ভারসাম্য নড়বড়ে। বিশ্লেষণ বলছে, অতিরিক্ত সামরিক ব্যয় স্বল্পমেয়াদে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার বাড়িয়ে দেবে। এতে রাজস্বের বড় একটা অংশ যাবে ঋণ পরিশোধে।
সামরিক খাত থেকে অনেক প্রযুক্তির জন্ম হয়েছে—ইন্টারনেট, জিপিএস, পারমাণবিক শক্তি। বর্তমানেও সামরিক গবেষণা কিছু খাতে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সামরিক গবেষণা ১% বাড়লে সংশ্লিষ্ট শিল্পের উৎপাদনশীলতা ৮.৩% পর্যন্ত বাড়তে পারে। তবে এটা সুনির্দিষ্ট কিছু খাতে সীমিত, যেমন—AI, সাইবার ডিফেন্স, ড্রোন ইত্যাদি।
রাজনীতিকদের আশা, এই খাতে অর্থ ঢাললেই কর্মসংস্থান বাড়বে। বাস্তবতা ভিন্ন। আধুনিক অস্ত্র তৈরি হচ্ছে অটোমেশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে—যার ফলে নতুন কর্মসংস্থান সীমিত। ইউরোপের ৩০ মিলিয়ন শিল্পশ্রমিকের তুলনায় নতুন কর্মসংস্থান হবে মাত্র ৫ লাখ, যা সামান্য।
বিশেষ অঞ্চলে ভোটার তুষ্টির জন্য যদি এই ব্যয় হয়, তাহলে তা বিপজ্জনক। বরং প্রকৃত নিরাপত্তা প্রয়োজন থেকেই যদি ব্যয় বাড়ে, তা জনগণকে স্পষ্ট জানাতে হবে। না হলে সামাজিক খাত সংকুচিত হয়ে পড়বে, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে হবে কর বৃদ্ধির চড়া মাশুল।
সারসংক্ষেপে বললে:
বিশ্ব এখন এক নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতায় প্রবেশ করছে—যেখানে অস্ত্রের ভার কাঁধে নিয়েই চলতে হচ্ছে। শুধু কূটনৈতিক বা নিরাপত্তা নয়, প্রতিরক্ষা বাজেট এখন রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির এক বিরাট স্তম্ভ হয়ে উঠছে। তবে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর যৌক্তিকতা আর এর সামাজিক খরচের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে—আমরা যুদ্ধ জিতেও স্বাধীনতা হারাতে পারি।
আপনার মতামত লিখুন