শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ

ভারতে বাঙালি মুসলমানেরা আতঙ্কে, এএফপির রিপোর্ট

ভারতে বাঙালি মুসলমানেরা আতঙ্কে, এএফপির রিপোর্ট
ভারতের আহমেদাবাদে অভিযানের সময় আটক হওয়া অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছবিটি চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল তোলা ভারতের আহমেদাবাদে অভিযানের সময় আটক হওয়া অবৈধ বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছবিটি চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল তোলা।

ভারত থেকে শত শত বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানকে বিনা বিচারে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি-র এক প্রতিবেদন বলছে, বিষয়টি দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকারকর্মীরা একে বেআইনি ও ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত ‘নির্বাসন’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

ভারত সরকারের ভাষ্য—যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা ‘অবৈধ অভিবাসী’। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে চালানো এই অভিযান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পরিপন্থী।

“আতঙ্কে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানরা”

ভারতের প্রায় ২০ কোটির বেশি মুসলমানের একটি বড় অংশই বাংলা ভাষায় কথা বলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে অনেককেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে বন্দুকের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে।

ভারতের বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী হর্ষ মন্দার বলেন, “বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেন তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।”

“জোর করে সীমান্ত পাড় করানো হয়”

এএফপির প্রতিবেদনে আসামের রহিমা বেগমের বর্ণনা উঠে এসেছে। তিনি জানান, ‘আমার জন্ম ও বংশপরিচয় ভারতে হলেও আমাকে কয়েকজন মুসলিমের সঙ্গে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে জলাভূমির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রমে বাধ্য করা হয়।’

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের খুঁজে পান এবং ফেরত পাঠান। কিন্তু পরে আবার ভারতীয় বাহিনী তাকে আসামে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তবে ‘চুপচাপ থাকার’ শর্তে।

“আইন না মেনে নির্বাসন”

নয়াদিল্লিভিত্তিক আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে বলেন, “কোনো রাষ্ট্র কাউকে ফেরত পাঠাতে পারে না, যদি না অন্য রাষ্ট্র তাকে গ্রহণ করে। এমন নির্বাসন পুরোপুরি বেআইনি।”
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, মে মাস থেকে ভারত ১৬০০ জনকে সীমান্তে পাঠিয়েছে। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে এই সংখ্যা ২৫০০ ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের দাবি, ফেরত পাঠানোদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

“ঘৃণানীতির শিকার হচ্ছে মুসলমানরা”

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসনব্যবস্থায় বিশেষভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানরা ‘ঘৃণানীতির’ শিকার হচ্ছেন। গুজরাটের পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যজুড়ে ৬৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে যাদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

“পরিচয়পত্র দেখালেও কেউ শোনেনি”

মুম্বাই থেকে নির্মাণ শ্রমিক নাজিমুদ্দিন মণ্ডল জানান, তাকে আটক করে সামরিক বিমানে করে ত্রিপুরা সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারপ্রদত্ত পরিচয়পত্র দেখালেও তাতে বিশ্বাস করা হয়নি।

তিনি বলেন, “এখন কাজে বের হতেও ভয় লাগে। নিজের দেশেই আমি যেন অনাহূত।”

বিষয় : আন্তর্জাতিক ভারত মুসলমান

আপনার মতামত লিখুন

বাজিতপুর নিউজ

শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫


ভারতে বাঙালি মুসলমানেরা আতঙ্কে, এএফপির রিপোর্ট

প্রকাশের তারিখ : ২৮ জুন ২০২৫

featured Image

ভারত থেকে শত শত বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানকে বিনা বিচারে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘটনায় ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি-র এক প্রতিবেদন বলছে, বিষয়টি দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেছেন। মানবাধিকারকর্মীরা একে বেআইনি ও ধর্মীয় বিদ্বেষপ্রসূত ‘নির্বাসন’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

ভারত সরকারের ভাষ্য—যাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে তারা ‘অবৈধ অভিবাসী’। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে চালানো এই অভিযান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তির পরিপন্থী।

“আতঙ্কে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানরা”

ভারতের প্রায় ২০ কোটির বেশি মুসলমানের একটি বড় অংশই বাংলা ভাষায় কথা বলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে অনেককেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে বন্দুকের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়েছে।

ভারতের বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী হর্ষ মন্দার বলেন, “বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক বিরাজ করছে। যেন তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়েছে।”

“জোর করে সীমান্ত পাড় করানো হয়”

এএফপির প্রতিবেদনে আসামের রহিমা বেগমের বর্ণনা উঠে এসেছে। তিনি জানান, ‘আমার জন্ম ও বংশপরিচয় ভারতে হলেও আমাকে কয়েকজন মুসলিমের সঙ্গে সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে জলাভূমির মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে সীমান্ত অতিক্রমে বাধ্য করা হয়।’

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের খুঁজে পান এবং ফেরত পাঠান। কিন্তু পরে আবার ভারতীয় বাহিনী তাকে আসামে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তবে ‘চুপচাপ থাকার’ শর্তে।

“আইন না মেনে নির্বাসন”

নয়াদিল্লিভিত্তিক আইনজীবী সঞ্জয় হেগড়ে বলেন, “কোনো রাষ্ট্র কাউকে ফেরত পাঠাতে পারে না, যদি না অন্য রাষ্ট্র তাকে গ্রহণ করে। এমন নির্বাসন পুরোপুরি বেআইনি।”
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, মে মাস থেকে ভারত ১৬০০ জনকে সীমান্তে পাঠিয়েছে। যদিও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে এই সংখ্যা ২৫০০ ছাড়িয়েছে।

বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষীদের দাবি, ফেরত পাঠানোদের মধ্যে অন্তত ১০০ জন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

“ঘৃণানীতির শিকার হচ্ছে মুসলমানরা”

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসনব্যবস্থায় বিশেষভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানরা ‘ঘৃণানীতির’ শিকার হচ্ছেন। গুজরাটের পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যজুড়ে ৬৫০০ জনকে আটক করা হয়েছে যাদের অনেকেই ভারতীয় নাগরিক ছিলেন।

“পরিচয়পত্র দেখালেও কেউ শোনেনি”

মুম্বাই থেকে নির্মাণ শ্রমিক নাজিমুদ্দিন মণ্ডল জানান, তাকে আটক করে সামরিক বিমানে করে ত্রিপুরা সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারপ্রদত্ত পরিচয়পত্র দেখালেও তাতে বিশ্বাস করা হয়নি।

তিনি বলেন, “এখন কাজে বের হতেও ভয় লাগে। নিজের দেশেই আমি যেন অনাহূত।”


বাজিতপুর নিউজ

প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ মোশিউর রহমান আতিক | নির্বাহী সম্পাদক: মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
কপিরাইট © ২০২৫ বাজিতপুর নিউজ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত