রোববার, ২৯ জুন ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ

ইসলামের পক্ষে এক বাক্সে ভোট চাইলেন চরমোনাই পীর

ইসলামের পক্ষে এক বাক্সে ভোট চাইলেন চরমোনাই পীর

ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সব ইসলামপন্থি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘এক বাক্সে’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। তাই ইসলামের পক্ষের সব ভোট দিতে হবে এক বাক্সে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে “সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের” দাবিতে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশ ঘিরে আগের রাত থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও পিকআপযোগে ঢাকায় আসেন। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় বক্তব্য, দুপুর ২টায় শুরু হয় মূল পর্ব। আশপাশের শাহবাগ, টিএসসি, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ে।

চরমোনাই পীর বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে অন্যান্য ধর্ম ও মত-পথের মানুষও সংসদে যেতে পারবেন। দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান—এটা নিশ্চিত করতে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।”

তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানকে “গণআকাঙ্ক্ষা ও ধর্মবোধবিরোধী” বলে মন্তব্য করেন এবং দাবি করেন, সেটি “ভিনদেশি সংবিধান অনুকরণে তৈরি” হওয়ায় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তিনি বলেন, “সংবিধান মেনেই দেশে স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে।”

চরমোনাই পীর অভিযোগ করেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনসমর্থনপুষ্ট হলেও তারা সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পালনে গড়িমসি করছে। এটা বিশ্বাসঘাতকতা। যদি লক্ষ্যচ্যুতি হয়, জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেবে।”

তিনি বলেন, “মৌলিক সংস্কার ছাড়া আরেকটি নির্বাচন দেশকে আগের সংকটে ফেরত নিয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সুশাসনের নিশ্চয়তা।”

পিআর ভিত্তিক নির্বাচন দাবিতে ঐক্যমত

সমাবেশে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) ভিত্তিক নির্বাচন চেয়ে বক্তব্য রাখেন জামায়াত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের নেতারা। জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিসের ড. আহমাদ আবদুল কাদের, নেজামে ইসলামী বাংলাদেশের মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি বক্তব্যে

সমাবেশে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক, বৌদ্ধ সংগঠন বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও একসাথে ঐক্য ও ন্যায়বিচারের দাবি তোলেন।

১৬ দফা দাবিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা

দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সমাবেশে ১৬ দফা দাবিনামা পাঠ করেন, যার মধ্যে রয়েছে—

  • সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা পুনঃস্থাপন

  • সংসদে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন

  • ফ্যাসিবাদের বিচার ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার

  • ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ

  • দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের অযোগ্য ঘোষণা

  • ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা

  • রাষ্ট্রে ইসলামি আদর্শ বাস্তবায়ন

সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ

সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব হাফেজ ইউনুস আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, প্রচার সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

চরমোনাই পীর তার বক্তব্যে বলেন, “জালেমদের হাতে দেশ আর থাকতে দেওয়া যায় না। আমাদের লক্ষ্য ইসলামী রাষ্ট্র। এজন্য সব ইসলামপ্রেমিকদের এক কাতারে এসে ‘এক বাক্সে’ ভোট দিতে হবে।”

বিষয় : বাংলাদেশ রাজনীতি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চরমোনাই পীর ইসলামী রাষ্ট্র

আপনার মতামত লিখুন

বাজিতপুর নিউজ

রোববার, ২৯ জুন ২০২৫


ইসলামের পক্ষে এক বাক্সে ভোট চাইলেন চরমোনাই পীর

প্রকাশের তারিখ : ২৯ জুন ২০২৫

featured Image

ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সব ইসলামপন্থি শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘এক বাক্সে’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, “আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। তাই ইসলামের পক্ষের সব ভোট দিতে হবে এক বাক্সে।”

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে “সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের” দাবিতে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশ ঘিরে আগের রাত থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে নেতাকর্মীরা বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও পিকআপযোগে ঢাকায় আসেন। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় বক্তব্য, দুপুর ২টায় শুরু হয় মূল পর্ব। আশপাশের শাহবাগ, টিএসসি, রমনা পার্ক, মৎস্য ভবন পর্যন্ত নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছড়িয়ে পড়ে।

চরমোনাই পীর বলেন, “পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে অন্যান্য ধর্ম ও মত-পথের মানুষও সংসদে যেতে পারবেন। দেশের সব মানুষের ভোটের দাম সমান—এটা নিশ্চিত করতে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।”

তিনি ১৯৭২ সালের সংবিধানকে “গণআকাঙ্ক্ষা ও ধর্মবোধবিরোধী” বলে মন্তব্য করেন এবং দাবি করেন, সেটি “ভিনদেশি সংবিধান অনুকরণে তৈরি” হওয়ায় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তিনি বলেন, “সংবিধান মেনেই দেশে স্বৈরাচার তৈরি হয়েছে।”

চরমোনাই পীর অভিযোগ করেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনসমর্থনপুষ্ট হলেও তারা সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার পালনে গড়িমসি করছে। এটা বিশ্বাসঘাতকতা। যদি লক্ষ্যচ্যুতি হয়, জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেবে।”

তিনি বলেন, “মৌলিক সংস্কার ছাড়া আরেকটি নির্বাচন দেশকে আগের সংকটে ফেরত নিয়ে যাবে। তাই প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সুশাসনের নিশ্চয়তা।”

পিআর ভিত্তিক নির্বাচন দাবিতে ঐক্যমত

সমাবেশে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) ভিত্তিক নির্বাচন চেয়ে বক্তব্য রাখেন জামায়াত, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থি দলের নেতারা। জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, খেলাফত মজলিসের ড. আহমাদ আবদুল কাদের, নেজামে ইসলামী বাংলাদেশের মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধি বক্তব্যে

সমাবেশে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক, বৌদ্ধ সংগঠন বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া এবং বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও একসাথে ঐক্য ও ন্যায়বিচারের দাবি তোলেন।

১৬ দফা দাবিতে মহাসমাবেশের ঘোষণা

দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান সমাবেশে ১৬ দফা দাবিনামা পাঠ করেন, যার মধ্যে রয়েছে—

  • সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা পুনঃস্থাপন

  • সংসদে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন

  • ফ্যাসিবাদের বিচার ও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার

  • ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ

  • দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের অযোগ্য ঘোষণা

  • ইসলামবিরোধী কার্যকলাপ বন্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা

  • রাষ্ট্রে ইসলামি আদর্শ বাস্তবায়ন

সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ

সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব হাফেজ ইউনুস আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, প্রচার সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।

চরমোনাই পীর তার বক্তব্যে বলেন, “জালেমদের হাতে দেশ আর থাকতে দেওয়া যায় না। আমাদের লক্ষ্য ইসলামী রাষ্ট্র। এজন্য সব ইসলামপ্রেমিকদের এক কাতারে এসে ‘এক বাক্সে’ ভোট দিতে হবে।”


বাজিতপুর নিউজ

প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ মোশিউর রহমান আতিক | নির্বাহী সম্পাদক: মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
কপিরাইট © ২০২৫ বাজিতপুর নিউজ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত