শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ

বাজিতপুরে ৬০ লাখ টাকার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস

বাজিতপুরে ৬০ লাখ টাকার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে নদী ও হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় পরিচালিত ১২ ঘণ্টাব্যাপী এক বড় ধরনের অভিযানে প্রায় ৬০ লাখ টাকার অবৈধ কারেন্ট ও চায়না/ম্যাজিক জাল জব্দ করে সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে প্রশাসন।

বুধবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার হিলচিয়া বাজার এলাকায় যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেয় উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা

জব্দ করা জালের পরিমাণ ও মূল্য:

  • ৬৪ বস্তা কারেন্ট জাল

    • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১২,৪০০ মিটার

    • বাজারমূল্য: আনুমানিক ১৭,৯২,০০০ টাকা

  • ১,০৫০ পিস চায়না/ম্যাজিক জাল

    • দৈর্ঘ্য: ২৬,২৫০ মিটার

    • বাজারমূল্য: আনুমানিক ৪২,০০,০০০ টাকা

মোট বাজারমূল্য: প্রায় ৫৯,৯২,০০০ টাকা

অভিযানের নেতৃত্ব ও মন্তব্য:

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারাশিদ বিন এনাম বলেন—

“এটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও তথ্যভিত্তিক অভিযান। এই অবৈধ জালগুলো নদী ও হাওরের জীববৈচিত্র্যের জন্য ছিল মারাত্মক হুমকি। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা গেল।”

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম রিয়েল বলেন—

“আমার চাকরি জীবনের সবচেয়ে বড় অভিযান ছিল এটি। রাত ৯টার পর স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় নদীপাড়ে খোলা জায়গায় জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করি।”

রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধ্বংস কার্যক্রম শেষ হয়।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই অভিযান?

জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, চায়না ও কারেন্ট জাল মূলত মা মাছ ও পোনা নিধনে ব্যবহৃত হয়, যা প্রজনন চক্র ধ্বংস করে এবং মৎস্য উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। বিশেষত হাওরাঞ্চলে এসব জালের ব্যবহার এক ধরনের নীরব পরিবেশগত দুর্যোগ তৈরি করছে।

প্রশাসন জানিয়েছে,

“হাওরাঞ্চলের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও নিয়মিত চলবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:

এই দীর্ঘ রাতভর অভিযানে স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই অভিযানের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এলাকাবাসী বলছে—

“এভাবে অভিযান না চললে নদী থেকে মাছ উঠা একদিন বন্ধ হয়ে যেত। এটা একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।”

এই অভিযান কেবল জাল পুড়িয়ে শেষ হয়নি, এটি ছিল একটি বার্তা—নদী ও হাওর শুধু খাবারের উৎস নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের শেকড়। প্রশাসন যদি এমন অভিযান অব্যাহত রাখে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা যাবে এই মৎস্যভান্ডার।

বিষয় : বাজিতপুর কিশোরগঞ্জ

আপনার মতামত লিখুন

বাজিতপুর নিউজ

শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫


বাজিতপুরে ৬০ লাখ টাকার অবৈধ জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস

প্রকাশের তারিখ : ০৩ জুলাই ২০২৫

featured Image

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে নদী ও হাওরের প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় পরিচালিত ১২ ঘণ্টাব্যাপী এক বড় ধরনের অভিযানে প্রায় ৬০ লাখ টাকার অবৈধ কারেন্ট ও চায়না/ম্যাজিক জাল জব্দ করে সেগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে প্রশাসন।

বুধবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলার হিলচিয়া বাজার এলাকায় যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেয় উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিস এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা

জব্দ করা জালের পরিমাণ ও মূল্য:

  • ৬৪ বস্তা কারেন্ট জাল

    • দৈর্ঘ্য: প্রায় ১২,৪০০ মিটার

    • বাজারমূল্য: আনুমানিক ১৭,৯২,০০০ টাকা

  • ১,০৫০ পিস চায়না/ম্যাজিক জাল

    • দৈর্ঘ্য: ২৬,২৫০ মিটার

    • বাজারমূল্য: আনুমানিক ৪২,০০,০০০ টাকা

মোট বাজারমূল্য: প্রায় ৫৯,৯২,০০০ টাকা

অভিযানের নেতৃত্ব ও মন্তব্য:

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারাশিদ বিন এনাম বলেন—

“এটা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত ও তথ্যভিত্তিক অভিযান। এই অবৈধ জালগুলো নদী ও হাওরের জীববৈচিত্র্যের জন্য ছিল মারাত্মক হুমকি। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করা গেল।”

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম রিয়েল বলেন—

“আমার চাকরি জীবনের সবচেয়ে বড় অভিযান ছিল এটি। রাত ৯টার পর স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় নদীপাড়ে খোলা জায়গায় জালগুলো পুড়িয়ে ধ্বংস করি।”

রাত সাড়ে ১২টার দিকে ধ্বংস কার্যক্রম শেষ হয়।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই অভিযান?

জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, চায়না ও কারেন্ট জাল মূলত মা মাছ ও পোনা নিধনে ব্যবহৃত হয়, যা প্রজনন চক্র ধ্বংস করে এবং মৎস্য উৎপাদনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। বিশেষত হাওরাঞ্চলে এসব জালের ব্যবহার এক ধরনের নীরব পরিবেশগত দুর্যোগ তৈরি করছে।

প্রশাসন জানিয়েছে,

“হাওরাঞ্চলের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও নিয়মিত চলবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া:

এই দীর্ঘ রাতভর অভিযানে স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই অভিযানের সময় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এলাকাবাসী বলছে—

“এভাবে অভিযান না চললে নদী থেকে মাছ উঠা একদিন বন্ধ হয়ে যেত। এটা একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।”

এই অভিযান কেবল জাল পুড়িয়ে শেষ হয়নি, এটি ছিল একটি বার্তা—নদী ও হাওর শুধু খাবারের উৎস নয়, এটা আমাদের অস্তিত্বের শেকড়। প্রশাসন যদি এমন অভিযান অব্যাহত রাখে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাঁচিয়ে রাখা যাবে এই মৎস্যভান্ডার।


বাজিতপুর নিউজ

প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ মোশিউর রহমান আতিক | নির্বাহী সম্পাদক: মোহাম্মদ খলিলুর রহমান
কপিরাইট © ২০২৫ বাজিতপুর নিউজ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত