শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
বাজিতপুর নিউজ

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের হওয়া রাষ্ট্রদ্রোহ ও নির্বাচন প্রহসনের মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।দুপুরে হাবিবুল আউয়ালকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন, অন্যদিকে আসামিপক্ষে আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।এই মামলায় হাবিবুল আউয়ালের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার বাদী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সালাহউদ্দিন খান।মামলা ও অভিযোগ:গত ২২ জুন শেরেবাংলা নগর থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরিকল্পিতভাবে অনিয়ম, কারচুপি ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি হয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও ছিল পক্ষপাতদুষ্ট, অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধান লঙ্ঘনমূলক।মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা ও এটিএম শামসুল হুদাকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, এ কে এম শহীদুল হক, জাবেদ পাটোয়ারী, বেনজির আহমেদ এবং বর্তমান আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।সংবেদনশীল অভিযোগ:মামলায় অভিযোগ করা হয়, নির্বাচনগুলোতে বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ভয় দেখিয়ে, গায়েবি মামলা, অপহরণ ও গুমের মাধ্যমে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হয়। এতে সংবিধান ও নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে। সরকারি কর্মচারী হয়েও অবৈধভাবে ভোট প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ রয়েছে।বিশ্লেষণ ও প্রেক্ষাপট:এই মামলায় রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনাটি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও বিচার ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিযোগগুলো প্রথমবারের মতো বিচারিক পর্যায়ে প্রবেশ করলো। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগগুলো বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে, বিএনপির মতে, এটি রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক দায়দায়িত্ব নির্ধারণের একটি ‘অবশেষ প্রয়াস’।তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই মামলাগুলো কি আইনের শাসনের প্রতিফলন নাকি রাজনৈতিক পাল্টা আক্রমণের একটি কৌশল? আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ ও রায়ের দিকেই এখন তাকিয়ে দেশবাসী। শেষ কথা: এই মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া যদি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হয়, তবে এটি হতে পারে বাংলাদেশের নির্বাচনি সংস্কারে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। নতুবা এটি পরিণত হতে পারে আরেকটি রাজনৈতিক নাটকের নতুন দৃশ্যে।

সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর