শেষ ঠিকানার কারিগর আর নেই
একজন নিঃস্বার্থ, নিরবে কাজ করে যাওয়া মহৎ মানুষের চিরবিদায়। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্ধি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, গোরখোদক হিসেবে পরিচিত মনু মিয়া আর নেই।শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়সিদ্ধি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বাহাউদ্দিন ঠাকুর।পাঁচ দশকের নিঃস্বার্থ কর্মজীবনমনু মিয়া ছিলেন কেবল একজন কবর খননকারী নন, ছিলেন এক অনন্য মানবিক প্রতীক। গত প্রায় ৪৯ বছর ধরে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষের জন্য। কখনো কোনো পারিশ্রমিক নেননি, কোনো প্রতিদান চাননি—চেয়েছেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি।তিনি এতটাই নিয়োজিত ছিলেন তার কাজে যে, একসময় নিজের দোকান বিক্রি করে কিনেছিলেন একটি ঘোড়া। সেই ঘোড়ার পিঠে চড়েই ছুটে যেতেন আশপাশের গ্রামের মৃত্যুবাড়িতে। অনেকে তাকে ডাকতেন “শেষ ঠিকানার কারিগর” নামে।এক প্রিয় সঙ্গীর মৃত্যু, এক মন ভাঙার গল্পঢাকার আইনজীবী ও স্থানীয় সন্তান অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ রোকন রেজা জানান, কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মনু মিয়া। সেই সময় দুর্বৃত্তরা তার বহু বছরের সঙ্গী প্রিয় ঘোড়াটিকে হত্যা করে। ঘোড়ার মৃত্যু যেন তার প্রাণশক্তিই কেড়ে নেয়।রোকন রেজা বলেন,
“আমি হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়ে বলেছিলাম—অনেকে আপনাকে নতুন ঘোড়া কিনে দিতে চায়। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এই কাজ করি শুধু আল্লাহকে খুশি করতে। মানুষের কাছ থেকে কিছু নিতে চাই না।’”
ঘোড়ার মৃত্যুর পর থেকেই মনু মিয়া আরও দুর্বল হয়ে পড়েন। চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে এলেও আর আগের মতো হতে পারেননি।এলাকাজুড়ে শোকমনু মিয়ার মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্যানেল চেয়ারম্যান বাহাউদ্দিন ঠাকুর বলেন,
“তার মৃত্যুতে আমরা একজন দয়ার সাগর, নিঃস্বার্থ মানুষকে হারালাম। এমন মানুষের অভাব কখনো পূরণ হওয়ার নয়।”
স্থানীয়রাও জানান, মনু মিয়া ছিলেন সমাজের দর্পণ, এক জীবন্ত দৃষ্টান্ত। তার জীবনের প্রতিটি কাজ ছিল নিঃস্বার্থ ভালোবাসার ছাপ। মৃত্যুর পরও শত শত মানুষ তার জন্য দোয়া করছেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন।