অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রীর কিডনি দান, নিঃস্ব পরিবারের পাশে ছাত্রদল নেতা
প্রাণপ্রিয় স্বামীকে বাঁচাতে স্ত্রী নিজেই এগিয়ে এসেছেন কিডনি দিতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিপুল ব্যয়ের চিকিৎসা খরচ। এমন সংকটে পাশে দাঁড়িয়েছেন এক ছাত্রনেতা—একটি নিঃস্ব পরিবারের আশার বাতিঘর হয়ে।কটিয়াদীর মুমুরদিয়া ইউনিয়নের লাংটিয়া গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ আলী ভূঁইয়ার (অমৃত) মেজো ছেলে মনিরুল ইসলাম রানা (৪৫) দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রানার দুইটি কিডনিই অকেজো। তাকে বাঁচাতে হলে কিডনি প্রতিস্থাপন জরুরি। তাঁর স্ত্রী নিজেই স্বামীকে একটি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা রীতিমতো আত্মত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত।তবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ। ভারতে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজন প্রায় বিশ লক্ষ টাকা—যা একটি সাধারণ পরিবারের জন্য স্বপ্নের মতো দূর। রানা বর্তমানে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত এবং সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। এতে পরিবারটি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়ে।এই চরম দুঃসময়ে উদ্যোগ নেন এলাকার তরুণ নেতা, উপজেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব কামরুল ইসলাম। তিনিই রানার চিকিৎসার জন্য তহবিল সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করেন। তার আহ্বানে গ্রামের তরুণরা একত্র হন, প্রবাসী এবং দেশের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন।তহবিল সংগ্রহে তার পাশে ছিলেন—
প্রভাষক তরিকুল ইসলাম টিটু, সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন কাকন, প্রকৌশলী যুবায়েদ হোসেন রুবেল, ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম বিপুল, সমাজসেবক মোহাম্মদ আল-আমিন, তাহসিন তানভীর অন্তর সহ অনেকে।
১৯ লক্ষাধিক টাকার সহায়তাবুধবার দুপুরে ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম রানার বাড়িতে গিয়ে তার হাতে ১,৯১৯,১৮২ টাকা (উনিশ লক্ষ উনিশ হাজার একশ বিয়াশি টাকা) তুলে দেন। পাশাপাশি আরও দুই লক্ষ টাকা সহায়তার আশ্বাস দেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন—
উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বদরুল আলম নাঈম, মুমুরদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাদিউল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক তশরীফুল হাছিব, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বাচ্চু, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা মোকারম হোসেন লিটন, কাজল ভূঁইয়া, ছাত্রদলের নেতা তরিকুল ইসলাম ও নকিব হুদা প্রমুখ।
পরিবারের কৃতজ্ঞতারানার বড় ভাই মহিবুল হাসান পলাশ বলেন—
“আমাদের এই দুঃসময়ে যারা এগিয়ে এসেছেন, দেশ-বিদেশ থেকে যারা সাহায্য পাঠিয়েছেন—তাঁদের সবার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। আমার ভাই যেন সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরতে পারে, সবার কাছে সেই দোয়া চাই।”
ছাত্রদল নেতা কামরুল ইসলাম বলেন—
“মানবিক প্রয়োজনে আমরা সবাই এক হয়েছি। যারা সাহায্য করেছেন, বিশেষ করে প্রবাসীরা, তাঁদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা। রাজনীতি যদি এমন মানবিকতার হাতিয়ার হয়, তাহলেই তার অর্থ আছে।”
এলাকাবাসীর মূল্যায়নএলাকাবাসীরা এই মানবিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন—
“ছাত্রনেতা কামরুল যেভাবে নিঃস্ব পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটি আজকের তরুণ রাজনীতিকদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। রাজনীতিকে সমাজসেবা ও জনকল্যাণে লাগাতে হবে—এটাই কামরুলদের থেকে শেখার সময়।”
একজন লড়াকু মানুষ
ব্যক্তিগত জীবনে মনিরুল ইসলাম রানা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। আজ সেই মানুষটি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। স্ত্রী কিডনি দিতে চাইলেও, তার জীবন এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে মানুষের সহানুভূতি ও আর্থিক সহযোগিতার ওপর।