২৬ জুলাই ২০২৫ কিশোরগঞ্জ শহরের পুরান থানা এলাকায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত পথসভা কেবল রাজনৈতিক বক্তব্যেই থেমে থাকেনি—তা ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় রাজনীতির স্নায়ু-যুদ্ধেও। এনসিপির পথসভায় সরাসরি অংশগ্রহণ করায় কিশোরগঞ্জ জেলা যুবলীগ থেকে বহিষ্কার হয়েছেন তিনজন পরিচিত নেতা।বহিষ্কৃতদের তালিকা: ১. গোলাম কবির – ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ২. কামরুজ্জামান – কিশোরগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ৩. বাসেত আহমেদ – ইটনা উপজেলা যুবলীগের সদস্য ঘটনার সূত্রপাত হয় গোলাম কবিরের বক্তব্য থেকে, যিনি এনসিপির পথসভায় মঞ্চে উঠে সরাসরি বক্তৃতা দেন। সেই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা যুবলীগের অভ্যন্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। পরে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, অপর দুই নেতা—কামরুজ্জামান ও বাসেত আহমেদও একই সভায় অংশ নিয়েছিলেন।এনিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা যুবলীগ দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়। দলীয় গঠনতন্ত্রের ২২(ক) ধারা অনুযায়ী তিনজনকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মীর আমিনুল ইসলাম ও মো. রুহুল আমিন খান। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই তিন নেতাই বর্তমানে পলাতক। বহিষ্কৃত গোলাম কবির অবশ্য পুরো ঘটনার ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানান, তিনি ২০১৮ সালেই যুবলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন এবং এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলন ও জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, “আমি যুবলীগের কেউ নই, অতএব বহিষ্কারের প্রশ্নও আসে না। এটা রাজনৈতিক নাটক।” এই বহিষ্কার কেবল দলীয় শৃঙ্খলার বিষয় নয়—এটি কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে এক স্পষ্ট বার্তা। এনসিপির মতো বিকল্প রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণ করা মানে ক্ষমতাসীন দল কিংবা তার অঙ্গসংগঠনের কাছে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র নামান্তর। আবার এই ঘটনাই প্রমাণ করে যে, বিকল্প চিন্তাধারা ও নতুন রাজনৈতিক আবহে তরুণ নেতাদের টান স্পষ্ট। যদিও বহিষ্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, প্রশ্ন রয়ে গেছে—একটি নতুন রাজনৈতিক জাগরণ কি কিশোরগঞ্জের পুরনো রাজনৈতিক ছককে বদলে দিচ্ছে? সময়ই দেবে জবাব। তবে এতটুকু স্পষ্ট, এনসিপির জুলাই আন্দোলন এখন আর কেবল পদযাত্রা নয়—এটি রাজনৈতিক বাস্তবতার এক নতুন ঢেউ।