নির্বাচন ঘিরে ঐক্যের সুর ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশে
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা হয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে। শনিবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই মহাসমাবেশে ইসলামী দলগুলোর ঐক্য, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করা হয়।
ঐক্য ও নেতৃত্বের বার্তামহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেন, “গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। ইসলামী দলগুলো আগামী নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হবে। আমরা চাই ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে আসুক। জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনে ইসলামী নেতৃত্ব অপরিহার্য।”তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন, ন্যায়ের শাসন এবং জনতার কাছে রাষ্ট্রপ্রধানের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।”
জামায়াতের অবস্থানজামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “আজকের সমাবেশে যে ঐক্যের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তা ইসলামী রাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে। আনুপাতিক পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।”তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে বলেন, “আপনার ভূমিকা নিয়ে জাতির মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখুন, এক দলের সঙ্গে বৈঠকে ভিন্ন বার্তা দিলে তা বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।”
১৬ দফা দাবি উত্থাপনসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান ১৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবিগুলো হল-:>> সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি রূপে পুনঃস্থাপন।>> সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন।>> জুলাই সনদের ঘোষণা ও শোষণমুক্ত রাষ্ট্র বিনির্মাণে জাতীয় ঐকমত্য।>> ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার ও দলীয় কর্তৃত্ববাদ রোধে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার।>> সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনে ‘ফ্যাসিবাদী’ প্রভাবমুক্ত সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।>> পতিত ফ্যাসিবাদের বিচার ও পালাতক অপরাধীদের ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক পদক্ষেপ।>> পাচার করা অর্থ উদ্ধার ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ।>> সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও খুনখারাবি রোধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা।>> ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি প্রকাশ ও দেশবিরোধী চুক্তির বাতিল।>> জাতীয় নির্বাচনের আগে সব পর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিধান প্রণয়ন।>> দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।>> নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ নিশ্চিত করা।>> ঘুষ-দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ এবং মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।>> ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।>> জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দুর্নীতিবাজ ও চাঁদাবাজদের প্রতিহত করা।>> রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আলোকিত আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান।
সম্প্রীতির বার্তাসমাবেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন, যার মধ্যে ছিলেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বৌদ্ধ ভাবনা কেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।
সমাবেশে জনস্রোত
সকাল থেকেই ঢাকার শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সারাদেশ থেকে আগত নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। দুপুর ২টায় সমাবেশের মূল পর্ব শুরুর আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনেক নেতাকর্মী এলইডি স্ক্রিনে বাইরে থেকে সমাবেশ অনুসরণ করেন।